পেলে সম্পর্কিত কিছু তথ্য
মাত্র সতের বছর বয়সে তারকাখ্যাতি পেয়েছিলেন পেলে সুইডেনের ১৯৫৮ সালের বিশ্বকাপ জয়ে ব্রাজিল দলের হয়ে দারুণ ভূমিকার জন্য। তার ২১ বছরের ফুটবল ক্যারিয়ারে ১৩৬৩ ম্যাচ খেলে রেকর্ড ১২৮১ গোল করেন পেলে। এর মধ্যে ব্রাজিলের হয়ে ৯২ ম্যাচে ৭৭টি আন্তর্জাতিক গোলও রয়েছে তার। মূলত তিন তিনবার বিশ্বকাপ জয় করার জন্য পেলে বিখ্যাত হয়েছেন। তিনিই একমাত্র খেলোয়াড় - নারী কিংবা পুরুষ - যিনি এতবার বিশ্বকাপ জয় করেছেন।
ব্যক্তিগত তথ্য
পূর্ণ নাম: এদসোঁ আরাঁচ দু নাসিমেঁতু
জন্ম: ২৩ অক্টোবর ১৯৪০
জন্মস্থান: ত্রেস কোরাকোয়েস, ব্রাজিল
মৃত্যু: ২৯ ডিসেম্বর ২০২২ (বয়স ৮২)
মৃত্যুর স্থান: মরম্বি, সাও পাওলো, ব্রাজিল
উচ্চতা: ১.৭৩ মি (৫ ফু ৮ ইঞ্চি)
প্রাথমিক জীবন
পেলে (জন্মনাম এদসোঁ আরাঁচ দু নাসিমেঁতু) ১৯৪০ সালের ২৩ অক্টোবর ব্রাজিলের ত্রেস কোরাচয়, মিনাস জেরাইসে জন্মগ্রহণ করেন। তার পিতার নাম দন্দিনহো এবং মাতার নাম সেলেস্তে আরাস। তার পিতাও একজন ফুটবলার ছিলেন ও ফ্লুমিনেস ফুটবল ক্লাবে খেলতেন। পেলে দুই ভাই-বোনের মধ্যে বড় ছিলেন এবং মার্কিন উদ্ভাবক টমাস এডিসনের নামানুসারে তার নাম রাখা হয়েছিল। তার পিতামাতা এডিসন (Edison) থেকে "i" সরিয়ে তাকে "এদসোঁ" (Edson) বলে ডাকার সিদ্ধান্ত নেয়, তবে বিভিন্ন সনদপত্রে ভুল করে তার নামের বানান "Edison" লিখতে দেখা যায়। পরিবারে তার ডাকনাম ছিল "জিকো"। বিদ্যালয়ে পড়াকালীন তিনি "পেলে" ডাকনামটি পান। এটি দাবি করা হয় যে, পেলে নিজেই তার ডাকনামটি দিয়েছিলেন, তার কাছে তার পছন্দের ডাকনাম চাওয়া হলে তিনি স্থানীয় ভাস্কো দা গামার গোলরক্ষক বিলের (Bilé) নাম উচ্চারণ করেন, তবে তিনি ভুলভাবে উচ্চারণ করেন, পরে পেলে অভিযোগ জানালেও বিদ্যালয়ে তার ডাকনাম পেলে রয়ে যায়। পেলে তার আত্মজীবনীতে লিখেছিলেন যে নামটির অর্থ কী তা নিয়ে তার এবং তার পুরানো বন্ধুদের তখন কোনও ধারণা ছিল না। নামটি "বিলে" থেকে উদ্ভূত হয়েছে, এবং হিব্রু ভাষার এটির অর্থ "অলৌকিক" (פֶּ֫לֶא), এই দুইটি বিষয় ছাড়া পর্তুগিজ ভাষায় শব্দটির কোনও পরিচিত অর্থ নেই।
পেলে সাও পাওলো রাজ্যের বাউরুতে দারিদ্রের মাঝে বেড়ে ওঠেন। চাকর হিসেবে তিনি চায়ের দোকানে কাজ করে বাড়তি অর্থ উপার্জন করতেন। তার বাবা তাকে ফুটবল খেলা শেখান, তবে তার একটি ফুটবল কেনার সামর্থ্য ছিল না, ফলে তিনি মোজার ভিতর সংবাদপত্র, দড়ি বা আঙ্গুর ঢুকিয়ে বল বানিয়ে খেলতেন। পেলে তার যৌবনে বেশ কয়েকটি অপেশাদার দলের হয়ে খেলেছেন, যার মধ্যে রয়েছে সেট ডি সেতেমব্রো, ক্যান্টো দো রিও, সাও পাওলিনহো এবং আমিরিকুইনহা। পেলে দুটি সাও পাওলো রাজ্য যুব চ্যাম্পিয়নশিপে বাউরু অ্যাথলেটিক ক্লাব জুনিয়রের নেতৃত্ব দেন (তাদের প্রশিক্ষক ছিলেন ওয়ালডেমার ডি ব্রিটো)। পেলে তার মধ্য-কৈশোরে, রেডিয়াম নামক একটি ইনডোর ফুটবল দলের হয়ে খেলেন। সেই সময় বাউরুতে ইনডোর ফুটবল সবেমাত্র জনপ্রিয় হতে শুরু করে। তিনি এই অঞ্চলের প্রথম ফুটসাল (ইনডোর ফুটবল) প্রতিযোগিতায় অংশ নিয়েছিলেন। পেলে এবং তার দল প্রথম চ্যাম্পিয়নশিপ এবং আরও বেশ কয়েকটি প্রতিযোগিতা জিতে।
পেলের মতে, ফুটসাল (ইনডোর ফুটবল) কঠিন চ্যালেঞ্জ উপস্থাপন করেছিল: তিনি বলেন এটি ঘাসের উপর ফুটবল খেলার চেয়ে অনেক দ্রুত ছিল এবং পিচে প্রত্যেকেই একে অপরের কাছাকাছি থাকায় খেলোয়াড়দের দ্রুত চিন্তা করতে হত। পেলে, ক্রীড়ায় আরও ভাল ভাবে চিন্তা করতে সহায়তা করার জন্য ফুটসালকে কৃতিত্ব দেন। উপরন্তু, ফুটসালের কারণে তিনি ১৪ বছর বয়সে প্রাপ্তবয়স্কদের সাথে খেলতে পেরেছিলেন। তিনি যে টুর্নামেন্টগুলিতে অংশ নিয়েছিলেন তার মধ্যে একটি টুর্নামেন্টে, প্রথমে তাকে খেলার জন্য খুব কম বয়সী বলে ভাবা হয়েছিল, তবে পেলে শেষ পর্যন্ত ১৪ বা ১৫টি গোল করে শীর্ষ গোলদাতা হিসাবে উক্ত টুর্নামেন্ট শেষ করেন। পেলে বলেন, "এটি আমাকে অনেক আত্মবিশ্বাস দিয়েছিল", "আমি তখন জানতাম যে যাই ঘটুক না কেন ভয় পেয়ো না"।
পেলে ২৯ ডিসেম্বর ২০২২ সালে ৮২ বছর বয়সে কোলন ক্যান্সারসহ বিভিন্ন রোগে আক্রান্ত হয়ে মৃত্যুবরণ করেন।