কর্মগুণ অনুসারে মানুষদের চারটি শ্রেণীতে ভাগ করা হয়েছে, জন্মগুণ অনুসারে নয়

কর্মগুণ অনুসারে মানুষদের চারটি শ্রেণীতে ভাগ করা হয়েছে:

“চাতুর্বর্ণ্যং ময়া সৃষ্টং গুণকর্মবিভাগশঃ।
(শ্রীমদ্ভগবত গীতার অধ্যায়- ৪, শ্লোক- ১৩)
অর্থাৎ কর্মগুণ অনুসারে মানুষদের চারটি শ্রেণীতে ভাগ করা হয়েছে। জন্মগুণ অনুসারে নয়। যার কারণে গাদির পুত্র বিশ্বামিত্র ছিলেন ব্রাহ্মন যদিও গাদি ছিলেন ক্ষত্রিয়। আবার শুদ্রের পুত্র রত্নাকর ব্রহ্মজ্ঞান অর্জন করে হয়েছিলেন ব্রাহ্মন। তার নাম হয়েছিল ঋষি বাল্মিকি এবং রচনা করেছিলেন রামায়ণের। এখানেই প্রমাণিত হয় যে ক্ষত্রিয় বা শুদ্রের ছেলেও ব্রাহ্মন হতে পারে।


ধর্মগ্রন্থ এটাও বলে-
জন্ম জায়তে শুদ্রঃ
সংস্কারঃ দ্বিজ উচ্চতে
বেদ পঠনাৎ ভবেত বিপ্র
ব্রহ্ম জ্ঞানেতী ইতি ব্রাহ্মন।
অর্থাৎ, জন্ম মূহুর্তে সকলেই শুদ্র, সংস্কার দ্বারা দ্বিজ, জ্ঞান লাভে বিপ্র আর ব্রহ্মজ্ঞানে হয় ব্রাহ্মন।
কিন্তু সাহার ঘরে কোনো শিশুর জন্ম হলে সাথে সাথেই আমরা তার নাম সাহা রেখে দেই। পালের ঘরে বাচ্চার জন্ম হলে সাথে সাথেই হয়ে যায় পাল।
যদিও সাহা, পাল, দত্ত, ঘোস এসব এবং এমন বাকি সব টাইটেলের উল্লেখ্য বেদ বা গীতায় নেই। এগুলা সব মানুষের তৈরি জিনিস। কিন্তু বিয়ের সময় পালেরা পাল ছাড়া বিয়ে করে না।
বিয়ের সময় আরো একটা জিনিস সবাই জানতে চায়। সেটা হচ্ছে গোত্র। গোত্র সম্পর্কে আমার নিজেরই জ্ঞান তেমন ছিলো না। তাই ইন্টারনেটে গোত্র সম্পর্কে জানার চেষ্টা করি এবং জানতে পারি হিন্দুদের অনেকগুলো গোত্র আছে। যেমন কাশ্যপ গোত্র, ভরদ্বাজ গোত্র, বিশ্বামিত্র গোত্র, শিব গোত্র, আলম্ব্যায়ন গোত্র ইত্যাদি। গোত্র শব্দটির অর্থ বংশ বা গোষ্ঠীকে বোঝায়। কাশ্যপ একজন ঋষির নাম ছিলো এবং ঐ ঋষির পরবর্তী বংশধর যারা আছে তারা সবাই কাশ্যপ গোত্রের। একইভাবে আলিম্ম্যন একজন ঋষি ছিলেন যার পরবর্তী বংশধরদেরকে আমরা আলিম্মন্য গোত্রের বলে থাকি। কাশ্যপ ছিলেন একজন ব্রাহ্মন কিন্তু তার পরবর্তী প্রজন্ম ব্রাহ্মন, বৈশ্য, শুদ্র, ক্ষত্রিয় সবই হয়েছে। যার কারণে আমরা অনেক শুদ্রকে বলতে দেখি যে তারা কাশ্যপ গোত্রের আবার অনেক ব্রাহ্মনও বলে যে তারা কাশ্যপ গোত্রের। তার মানে একই ঋষির সন্তানেরা ৪টি বর্ণেরই হয়েছে। তাহলে সাহার ছেলে শুধু সাহাই কেন হবে? পালের ছেলে শুধু পালই কেন হবে? ঘোষের ঘরে কোনো বাচ্চার জন্ম হলে সাথে সাথেই তার নামের সাথে ঘোষ টাইটেল কেন দিয়ে দেই।
মনুসংহিতা এবং উপনিষদে একই গোত্রের মধ্যে বিবাহ নিষিদ্ধ করা হয়েছে। প্রায় সব সাহারাই আলিম্ম্যন গোত্রের। কিন্তু সাহারা সাহা ছাড়া বিয়ে করতে চায় না। তার মানে তারা আলিম্ম্যন গোত্রের হয়ে আলিম্ম্যান গোত্রের মধ্যেই বিয়ে করছে। এটা কি হিন্দু ধর্মের অবমাননা নয়?
যারা জাত পাতে বিশ্বাসি তাদের সাথে কথা বলতে গেলে তারা সবাই পরশুরামের উদাহরণ দিয়ে বলে যে, পরশুরাম বর্ণবাদি ছিলেন। তিনি ক্ষত্রিয়দের অস্ত্র বিদ্যা শিখাতেন না। তাহলে আমরা কেন বর্ণ মানবো না। প্রথম কথা হচ্ছে, পরশুরাম ক্ষত্রিয়দের শেখাতেন না, ব্যাপারটা এমন নয়। বরং তিনি শপথ করেছিলেন অধার্মিক ক্ষত্রিয়দের বিনাশ করবেন। তাই তিনি অধার্মিক ক্ষত্রিয়দের অস্ত্র বিদ্যা প্রদান করতেন না। কিন্তু যারা ধার্মিক ক্ষত্রিয় ছিলো তারা সবাই পরশুরামের কাছ থেকে শিক্ষা গ্রহণ করতে পেরেছে। ভীষ্ম, রুকমি সহ আরো অনেক ক্ষত্রিয় পরশুরামকে গুরু হিসেবে পেয়েছে। দেবব্রত ক্ষত্রিয় ছিলেন কিন্তু তিনি ছিলেন ধার্মিক এবং বিশ্বস্ত যার কারণে তিনি পরশুরামের শিষ্য হতে পেরেছিলেন। কর্ণ মিথ্যার আশ্রয় নিয়ে পরশুরামের কাছে থেকে শিক্ষা গ্রহণ করেছিলো। সেই মিথ্যার শাস্তি ছিলো অভিশাপ। এখানে বর্ণবাদ নেই। বরং ধর্ম এবং অধর্মের ব্যাপার ছিলো।
তাই নিজের নিন্ম মন মানসিকতা থেকে বেরিয়ে আসুন এবং অন্যের উন্নত মানসিকতার সম্মান করুন,সমালোচনা না।
Next Post Previous Post
No Comment
Add Comment
comment url